কোটালীপাড়া নিউজ ডেস্ক :
জাহাজে ৬২ দিন বন্দি গ্রিমস
টেস্টই করিয়েছেন আটবার!
আট সপ্তাহ আগে, নভেল করোনাভাইরাস মহামারী কেবলই যুক্তরাষ্ট্রের জীবন স্থবির করা শুরু করে। রাজ্যগুলো সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়, ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায় এবং মানুষ একে অপরের থেকে এক মিটার দূরত্ব নিশ্চিত করছিল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ লাখেরও বেশি মানুষ কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ৯৬ হাজারেরও বেশি। বিশ্বে আক্রান্ত ৫২ মানুষ। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গোটা বিশ্বে সব শহর ও দেশের চিত্রই পাল্টে গেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী টেইলর গ্রিমসের সময় যেন এক জায়গায় আটকে আছে! টানা ৯ সপ্তাহ ইতালির এক বন্দরে জাহাজের মধ্যে আটক পড়ে আছেন তিনি। করোনাভাইরাসে পজিটিভ হওয়ায় প্রথমে ক্রুজ শিপে ও পরে হাসপাতাল শিপে অবস্থান করেন। এ সময় করোনাভাইরাসের পরীক্ষাই করা হয়েছে আটবার!
গত সপ্তাহে এক ভিডিও আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু দিন বেশ বাজে কেটেছে, আর কিছু দিন ঠিক ছিল।’
ইতালির জেনোয়া ভিত্তিক বিশ্বখ্যাত এমএসসি জাহাজের একজন কর্মী গ্রিমস। এই কোম্পানির সদর দফতর সুইজারল্যান্ডে এবং বিশ্বব্যাপী তাদের কর্মী ২৩ হাজার ৫০০ এবং ৪৫ দেশে রয়েছে তাদের অফিস। ভূমধ্যসাগরে চলাচলকারী গ্রিমসের জাহাজটি সর্বশেষ মধ্য জানুয়ারিতে জেনোয়া থেকে যাত্রা করে। এটি ছিল জাহাজের একজন কর্মী হিসেবে তার দ্বিতীয় সমুদ্রযাত্রা। বলাবাহুল্য, তিনি কাজ করতেন ওই জাহাজের জুয়েলারির দোকানে।
গ্রিমস জানান, গত ১৭ মার্চ তার এক বন্ধু ও এক সহকর্মী কভিড-১৯ পজিটিভ হন। তখন জাহাজের ক্যাপ্টেন ও ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করার পর গ্রিমস নিজে থেকেই আইসোলেশনে চলে যান। ১৫ দিন পর তিনিও পজিটিভ হন। এরপর আরো সাত সাতবার তার করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয় এবং কখনো পজিটিভ, কখনো নেগেটিভ হন তিনি।
গ্রিমসের মা অ্যান গ্রিমস বলেন, ‘আমরা তার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বেশ চিন্তিত। গত সোমবার সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিল আর বলছিল, দেশে ফিরে আসতে চায়। সে কেবলই পজিটিভ হয়েছে।’
গ্রিমস আশা প্রকাশ করেন, তার অষ্টম কভিড-১৯ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসবে, তখন তিনি দেশে ফিরে যাবেন। যদিও সর্বশেষ ফলটি কী এসেছে, তা জানা যায়নি।
গ্রিমসের মা অ্যান বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, ইতালির নিয়ম অনুযায়ী কোনো ক্রুজ শিপে থাকা কেউ টানা দুটি পরীক্ষা নেগেটিভ না এলে তাকে ছাড়া হবে না। তিনি বলেন, ‘এটা যদি নিয়ম হয়ে থাকে তবে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু সত্য হলো, পরীক্ষা নিরীক্ষা বেশ ত্রুটিপূর্ণ। কীভাবে একজন ৬২ দিন (গত সপ্তাহের হিসাব) কোয়ারেন্টিনে থাকতে পারে এবং এখনো পরীক্ষায় পজিটিভ আসে?’
গ্রিমস জানান, তিনি যে জাহাজে কাজ করেন সেই জাহাজ থেকে সব যাত্রীকে ৯ ও ১০ মার্চ নামিয়ে দেয়া হয়। তখন জাহাজে ছিলেন শুধু ২০০ কর্মী। কভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার পর গ্রিমসকে একটি গেস্ট রুমে নিয়ে রাখা হয়। তাকে একটি প্রটেকটিভ গিয়ার দেয়া হয় এবং পরে একটি হাসপাতাল শিপে নিয়ে পরীক্ষার পর পজিটিভ হন। তার ভাষায়, ‘তখন আমি মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়ি।’
তাকে হাসপাতাল শিপের ছোট্ট একটি রুমে রাখা হয়েছে। এসব রুমে অনেক স্থানীয় নাগরিককেও রাখা হয় যারা পজিটিভ কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন পড়েনি।
গত শনিবার সপ্তম পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে। অষ্টম পরীক্ষাও দিয়েছেন, যাতে তিনি নেগেটিভ ফল আশা করছেন। এবার নেগেটিভ এলেই তিনি কোনো কমার্শিয়াল ফ্লাইটে করে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবেন। অবশ্য সেখানেও কোয়ারেন্টিনে থাকার বাধ্যবাধকতা আছে। তবু গ্রিমসের যেন আর তর সইছে না। তার কথায়, ‘যত তাড়াতাড়ি দেশে ফিরতে পারি তত ভালো। তাতে আপনি আমাকে যেখানেই পাঠান না কেন।’
Leave a Reply