বিশেষ প্রতিনিধি :
হ্যালো, তুমি কি গোপালগঞ্জের ইউএনও আঙ্কেল বলছো ? আমি আমার ঈদের পোশাক কিনার জন্য বাবার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছি, আমি ঈদের পোশাক কিনবো না, তোমাকে ২০ হাজার টাকা দিব, তুমি গরীব ছেলে-মেয়েদের ঈদের জামা কিনে দিবা। ঢাকা থেকে তৃতীয় শ্রেনীর এক কন্যা শিক্ষার্থী ফোন করে গোপালগঞ্জ সদর ইউএনওকে এভাবেই বলছিল।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নানা প্রশ্নের উত্তরে ওই কোমলমতি শিশুটি জানায়, তুমি জনোনা তোমার নাম্বার গুগলে পাওয়া যায় ? আমি শরীফ তুরসীন কামাল, বারিধারা স্কলার্স ইন্সটিটিউটে তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ি। আমার বাবাকে তুমি বলবানা, তাহলে বাবা এই টাকা পাঠাতে দিবেনা। আমি টিভিতে দেখলাম গ্রামে অনেক বাড়িতে লোকজন খেতেই পারছেনা, তারা তাদের ছেলে-মেয়েদের ঈদের পোশাক দেবে কিভাবে, তাই আমি ঈদে পোশাক কিনবো না। আামার ঈদ খরচের টাকা দিয়ে আমার গ্রামের বাড়ির ছেলে-মেয়েদের ঈদের পোশাক দিতে চাই, তাই তোমাকে ফোন করছি।
ছোট্ট শিশুটি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাদিকুর রহমান খানকে ফোন করে তার ভাষায় এভাবেই বলছিল। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিশুটিকে অভয় দিয়ে তারা বাবার মোবাইল নম্বর নিয়ে ফোন করেন। নাম শরীফ কামাল হোসেন, বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের শরীফ পাড়ায়। তিনি ঢাকায় ব্যবসা করেন, থাকেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। তিনি তার মেয়ের এই ফোনালাপ শুনে প্রথমে হতবাক হন, পরে তার মেয়ের এই ইচ্ছা পুরনের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে টাকা পাঠিয়ে হত-দরিদ্র পরিবারের বাচ্চাদের পাশে দাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাদিকুর রহমান খান বলেছেন, স্কুল-কলেজ বন্ধ, সবাই ঘরবন্ধি, এ অবস্থায় থেকে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও মোবাইলে দেখছে করোনা মহামারীতে কোথায় কি হচ্ছে। আর তাই দেখেই হয়তো বারিধারা স্কলার্স ইন্সটিটিউটের তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী শরীফ তুরসীন কামালের মনে মানুষের সমস্যা পিড়া দিয়েছে। আর তাই সে আমার নম্বর যোগাড় করে ফোন করেছে। আমি তার বাবার সাথে কথা বলেছি, তিনিও তার মেয়ের ইচ্ছা পূরন করার জন্য আমার কাছে টাকা পাঠাতে চাইছেন। তার টাকা দিয়ে আমি নতুন পোশাক কিনে হত-দরিদ্র বাচ্চাদের দিয়ে ছোট্ট তুরসীনের ইচ্ছা পূরন করবো।
অন্যদিকে, রোববার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে গোপালগঞ্জ শহরের রংধনু স্কুলের ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসতিয়াক তার টিফিনের খরচ থেকে বাঁচানো এবং প্রতি রোজার ঈদ ও কোরবানীর ঈদে আত্মীয়স্বজনের দেয়া সালামীর টাকা থেকে জমানো ১৫ হাজার টাকা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাড়াতে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানার হাতে তুলে দেয়।
তৃতীয় শ্রেনীর এই শিক্ষার্থী ইসতিয়াক জানায়, বাসা থেকে দেয়া টিফিনের টাকা এবং প্রত্যেক রোজার ঈদ ও কোরবানীর ঈদে আয় আত্মীয় স্বজনের দেয়া টাকা আমি সব খরচ করিনা, জমিয়ে রাখি, এটা আমার অভ্যাস, প্রতিদিন টিভিতে করোনার খবর দেখি, গরিব মানুষদের সাহায্য করার খবর দেখি, তাই আমি আমার মায়ের সাথে কথা বলে আমার জমানো টাকা গুলো ডিসি স্যারের কাছে জমা দিলাম। স্যার এই টাকা দিয়ে গরীব মানুষদের খাবার কিনে দেবেন।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেছেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ, ৩য় শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী অপরকে সহযোগিতা করার এই মানসিকতা পোষন করে, ভাবতেই ভালো লাগে। তিনি আরও বলেন, শরীফ তুরসীন কামাল, ইসতিয়াকের মতো শিক্ষার্থীদের মাঝে অপরকে উপকার বা সহযোগিতা করার মানসিকতা তৈরী করার জন্য প্রয়োজনীয় মোটিভেশন দেয়াটা অত্যন্ত জরুরী, এতে একজন শিক্ষার্থী শুধু ভালো রেজাল্ট কেন্দ্রিকই হয়না, অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মানবিক গুণের অধিকারী হয়ে ওঠে, পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
Leave a Reply