কোটালীপাড়া প্রতিনিধি :
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কাঠমিস্ত্রি স্বামীকে হত্যার দায় স্বীকার করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিলো ঘাতক স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক
ভাত ও তরকারীর সাথে ঘুমের টেবলেট মিশিয়ে ভাত খাইয়ে অচেতনের পর গলায় গামছা পেচিয়ে কোটালীপাড়ার তালপুকুরিয়া গ্রামের কাঠমিস্ত্রি স্বামী কমলেশকে হত্যা করেছে স্ত্রী সুবর্ণা বাড়ৈ ও পরকীয়া প্রেমিক মন্মথ।
নিহত কমলেশ কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের তালপুকুরিয়া গ্রামের কেনারাম বাড়ৈর ছেলে।
পুলিশের কাছে আটক মন্মথ ও কমলেশের স্ত্রী সুবর্ণা বাড়ৈ আজ ২৭ মে (বুধবার) বিকেল ৩ টার দিকে প্রথমে পুলিশ ও পরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে এ কথা পরিস্কার করেছে।
আজ বুধবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহম্মদ ছানোয়ার হোসেন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন,গত ২ মার্চ পেশাগত কাজ শেষে বিকেলে বাড়ী ফেরে কাঠমিস্ত্রি নিহত কমলেশ। পুর্বপরিকল্পিত ভাবে নিহতর স্ত্রী এদিন রাতে ভাত ও তরকারীর সাথে বেশ কয়েকটি ঘুমের টেবলেট মিশিয়ে স্বামীকে খেতে দেয়। খাওয়ার কিছুক্ষন পরেই কমলেশ ঘুমিয়ে পড়ে। রাত ১২ টার পর পরকীয়া প্রেমিক মন্মথ ও স্ত্রী সুবর্ণা বাড়ৈ কমলেশের গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাষরোধ করে হত্যা করে। এরপর তারা দু-জনেই কমলেশের লাশ বাড়ীর ৪ থেকে ৫ শত গজ দুরে মন্মথর মাছের ঘেরপাড়ে মাটির নিচে পুতে রাখে। ঘটনার ৭ দিন পর ১০ মার্চ নিহত কমলেশের ভাই বাদী হয়ে থানায় একটি জিডি করে।
জিডির সূত্রধরেই কোটালীপাড়া থানা পুলিশ তদন্তে মাঠে নামে। জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রামের বিভিন্ন পেশার মানুষকে। ঘটনার ২ মাস ২৪ দিন পর গতকাল ২৬ মে ওই গ্রামের বিপুল বাড়ৈ নামে এক ব্যক্তি মম্মথর মাছের ঘেরপাড়ে ঘাস কাটতে গিয়ে মাটি খোঁড়া দেখতে পায়। এরপর খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি খুঁড়ে কমলেশের লাশ উদ্ধার করে। তিনি আরও জানান, সুবর্ণা পরকীয়া প্রেমিক মম্মথর সহযোগিতায় কমলেশকে হত্যা করে মরদেহ ঘের পাড়ে মাটি চাপা দিয়ে রাখে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে কমলেশের স্ত্রী সুবর্ণা বাড়ৈ, সুবর্ণার পরকীয়া প্রেমিক মম্মথ বাড়ৈর ভাই কৃষ্ণ বাড়ৈ, সহযোগী বিষ্ণু বাড়ৈ ও মম্মথর বন্ধু কালু বাড়ৈকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদের পর নিহতর স্ত্রী রাতেই হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে এবং পলাতক মন্মথর সন্ধান দেয়। পুলিশ রাতেই মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলা এলাকায় থেকে মন্মথকে গ্রেফতার করে। এরপর পুলিশ মন্মথ ও সুবর্ণা বাড়ৈ এক জায়গায় করে সামনা সামনি হত্যাকান্ডের বিস্তারিত জানতে চায়। এক সময় দু-জনই কেন এবং কিভাবে কমলেশকে হত্যা করা হয়েছে তা পুলিশের কাছে স্বীকার করে।
কমলেশ বাড়ৈর ভাই রবেণ বাড়ৈর থানায় দায়েরকৃত জিডির বরাত দিয়ে কোটালীপাড়া থানার ওসি শেখ লুৎফর রহমান বলেন, পরকীয়া প্রেমের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, কমলেশের স্ত্রী সুবর্ণা বাড়ৈর সাথে প্রতিবেশী মাছের ঘের মালিক মম্মথ বাড়ৈর দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বেশ কয়েকবার ঝগড়া ও মনোমালিন্য হয়েছে। এ নিয়ে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার সালিশ বৈঠকও করেছেন। কিন্তু, তাতেও কোন কাজ হয়নি। এরপর স্ত্রী সুবর্ণা ও পরকীয়া প্রেমিক মন্মথ কমলেশকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার ৫ দিন আগে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যথ হওয়ার একপর্যায়ে ৩ মার্চ রাতে ভাত ও তরকারির সাথে ঘুমের টেবলেট মিশিয়ে ভাত খাইয়ে কমলেশকে অচেতনের পর রাত ১২ টার পর গলায় গামছা পেঁচিয়ে কমলেশকে হত্যা করে স্ত্রী ও তার প্রেমিক মন্মথ।
Leave a Reply