গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি :
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ইটভাটা মালিক গ্রাস করছেন ফসলী জমি। জোর করে ইটভাটা মালিক ভাটার আশপাশের ফসালী জমিতে ইট ফেলে প্রায় ১৫ কৃষকের ২০ একর জমি জবর দখলে নিয়েছেন। সেখানে তিনি ভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। জমির মালিকরা তাদের জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেনা। এতে তাদের জীবন জীবিকা বন্ধ হতে চলেছে। ভাটার ধোঁয়ায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন ।
জমি দখলে বাধা দেয়ায় ভাটা মালিকের পেটোয়া বাহিনী কৃষক পরিবারের উপর হামলা করে মহিলা সহ ৫ জনকে আহত করেছে। ওই কৃষকের বাড়িতে হামলা করে বাড়িঘর ভাংচুর ও মালামল লুটপাট করা হয়েছে । এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক তপু সিকদার কাশিয়ানী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ ঘটনাটি ঘটেছে কাশিয়ানী উপজেলার সাজাইল ইউনিয়নের মাজড়া গ্রামে।
dig
সন্ত্রাসী হামলায় আহত মাজড়া গ্রামের কৃষক তপু সিকদার (৪৫) আভিযোগ করে বলেন, এলাকার প্রভাবশালী মনসুর মোল্লার ছেলে আব্দুর রহমান মোল্লা ৩ বছর আগে স্থানীয় জুইঁ মোল্লা,বাবু ফকিরসহ কয়েক জন কৃষকের কাছ থেকে ২ একর জমি লিজ নিয়ে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে ফসলী জমিতে স্বল্প পরিসরে মাছুম ব্রিকস্্ নামে একটি ইট-ভাটা স্থাপন করেন। সেখানে আব্দুর রহমানের নিজের কোন জমি নেই। এরপর তার ললুপ দৃষ্টি পড়ে আশপাশের ফসলী জমির ওপর। ভাটার ইট ফেলে ভাটার আশপাশের কৃষকের ৩ ফসলী জমিগুলোর জোর করে জবর দখলে নেয়। এভাবে ক্ষমতার দাপটে আব্দুর রহমান ১৫ কৃষকের প্রায় ২০ একর জমি অবৈধ দখলে রেখে ভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব জমিতে আমাদের চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। জীবন জীবিকা চলছেনা। ভাটার ধোঁয়ায় গোটা এলাকার ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। ফসল উৎপাদন কমে গেছে।
ওই কৃষক আরো বলেন, ভাটা মালিকের দখলে আমার তিন খন্ডে ২ একর ৮ শতাংশ জমি রয়েছে। এছাড়া কৃষক সবুর মোল্লার ২ একর, তোয়াব মিয়ার ১ একর, বাহারুল মোল্লার ২২ শতাংশ, পলাশ মিয়ার ৩০ শতংাশ সহ ১৫ জন কৃষকের ২০ একর ৩ ফসলী জমি রয়েছে।
তপু সিকদার বলেন, গত সোমবার ভাটা মালিকের জবর দখলে থাকা আমার ২ একর ৮ শতাংশ জমি আবাদ করতে গেলে ভাটা-মালিকের পেটোয়া বাহিনী আমাদের বাধা দেয় ও মাপিট করে। এরপর তারা দু’দফায় আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়িঘর ভাংচুর করে ও ঘরের মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। এতে আমি ও আমার মা হেলেনা বেগম সহ পরিবারের ৫ সদস্য আহত হয়েছি। খবর পেয়ে কাশিয়ানীর এসি-ল্যান্ড ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আমি এ ঘটনায় কাশিয়ানী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
এ ব্যাপারে কাশিয়ানীর এসি-ল্যান্ড আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ভাটা-মালিকের কাছে জমির কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে তিনি কারও জমি দখল করতে পারবেন না। এমনকি ইট-ভাটাও করতে পারবেন না। আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ওই ভাটার লাইসেন্সের মেয়াদ রয়েছে। কাগজপত্রে কোন সমস্যা থাকলে তার ভাটার লাইসেন্স নবায়ন আটকে যাবে।
কাশিয়ানীর ইউএনও রথীন্দ্রনাথ রায় বলেছেন, ইট-ভাটার মালিক যেই-ই হোন কেন, আইনের কোনও ব্যাত্যয় হবেনা। এলাকায় যাতে কোন উত্তেজনাকর পরিস্থির উদ্ভব না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি-চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
কাশিয়ানী থানার ওসি মোঃ আজিজুর রহমান বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দেখছেন। তারপরও কোন অপরাধ সংগঠিত হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাজাইল ইউপি-চেয়ারম্যান কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে বে-আইনীভাবে, অবৈধভাবে বা নিয়ম-বহির্ভূতভাবে কেউ কিছু করতে পারবে না।
এ ব্যাপারে মাছুম ব্রিকস্রে মালিক আব্দুর রহমান মোল্লা বলেন, আমাকে তপু সিকদার অপমান করেছে। আমার লোকজন এটি জানতে পেরে তাদের বাড়ি-ঘরে হামলা করে। তবে লুটপাটের অভিযোগ সত্য নয়। ভাটার পাশে ফাঁকা জমিতে কিছু ইট ফেলে রাখার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ইউপি-চেয়ারম্যান বিষয়টি সালিশ করে দেবেন।
Leave a Reply