মোঃ জাফরুল হাসান, কালকিনি (মাদারীপুর) থেকেঃ
নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আলীনগর এলাকার চর হোগলপাতিয়া গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি আড়িয়াল খা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এ নদীর তান্ডবে ভিটামাটি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ওই এলাকার সাধারন মানুষ। এ ছাড়া নদী গর্ভে বিলিন হতে চলেছে শতাধিক বাড়িঘর ও ঐতিহ্যবাহি চর হোগলপাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। হয়তো যে কোন মুহুর্তে ওই বিদ্যালটিকেও পুরোপুরিভাবে কেড়ে নিতে পারে আগ্রাসী হয়ে ওঠা আড়িয়াল খাঁ নদী। এতে করে ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীর পাড়ের ৫ গ্রামের মানুষ। এদিকে নদী ভাঙ্গনরোধে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে আজ মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে এক মানববন্ধন করেছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
সরেজমিন ও স্থানীয় লোকজনেরা জানান, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০/১২ কিলোমিটার দুরে রয়েছে চরহোগল পাতিয়া গ্রাম। এ গ্রামের একেবারে পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আড়িয়াল খাঁ নদী। এ গ্রামটি প্রত্যান্তঞ্চলে হওয়ায় অবহেলিতভাবে পড়ে আছে। বিগত দিনেও নদী গর্ভে চলে গেছে এ গ্রামের অনেক গাছপাল, বাড়িঘর ও কয়েকশ’ একর ফসলি জমি। তখন কেউ এগিয়ে আসেনি এ গ্রামের মানুষের পাশে। বর্তমানে এই গ্রামের অবহিলিত শিক্ষার্থীদের একমাত্র ১৫১ নং চর হোগলপাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশেই তীব্র ভাঙ্গনে মাটি সরে গেছে। এতে করে ঝুকিপূর্ন হওয়ায় বিদ্যালয়টি অনেক আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে পূনরায় একের পর এক আড়িয়াল খাঁ নদীর পেটে চলে গেছে আলী তালুকদার, সোবহান তালুকদার ও কামাল তালুকদারসহ প্রায় অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি ও ধান,পাটসহ বিভিন্ন প্রকার ফসলি জমি। ভাঙ্গন ঝুকিতে রয়েছে শতাধিক বসতবাড়িসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা। বর্তমানে হোগলপাতিয়া, চর হোগলপাতিয়া, ফুলবাড়িয়া-গজারিয়া ও রাজারচরসহ ৫টি গ্রামের মানুষ নদী ভাঙ্গন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। গ্রামের অবহেলিত চরহোগল পাতিয়া গ্রামের মানুষেরা বর্তমানে সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোন প্রকার ত্রানও পাননি। পানিবন্ধি হয়ে কাজকর্ম না করতে পেরে এখন খাদ্য অভাবে দিন কাটাতে হচ্ছে অনেকের। কিন্তু দ্রæত সময়ের মধ্যে সরকারিভাবে কোন ব্যবস্থ্য না নেয়া হলে পুরো চরহোগল পাতিয়া গ্রাম যে কোন মুহুর্তে বিলিন হতে পারে। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর হোসেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে ওই ভাঙ্গন কবলীত এলাকার নদী থেকে অবৈধভাবে দেদারছে বালু উত্তোলন করে আসছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। আর সে কারনেই বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার দাবী করেছেন। আর বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশীলী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলতে সাহস পাচ্ছেনা অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।
চর হোগলপাতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা বেগম বলেন, জুরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন রোধ করা না গেলে অচিরেই হয়তো আমাদের বিদ্যালয়ের অস্তিত্বই হারিয়ে যাবে।
ক্ষতিগ্রস্ত রহিমা বেগম ও আয়শা বেগমসহ বেশ কয়েকজন বলেন, আড়িয়াল খাঁ নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে আমাগো ঘরবাড়ি, জায়গা জমি সব কেড়ে নিয়ে গেছে আড়িয়াল খা। তবে বালু উত্তোলন ও ভাঙ্গন রোধ না করা হলে আমাগো বাকি যা আছে সব নদী চলে যাবে আমরা গ্রামবাসি নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে বাঁচতে চাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহেদ আলী বলেন, নদী ভাঙ্গনে সব বিলিনের পথে চলে যাচ্ছে। আমি চেষ্টা করছি ভাঙ্গন কবলিত মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য।
আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান মিলন বলেন, স্কুলটি বাঁচাতে ও আড়িয়াল খাঁ ভাঙ্গন বন্ধ করতে বহুবার প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছি। তবে দুঃখের বিষয় এখনো কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে ত্রান সহায়তার চেষ্টা চালাচ্ছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে শীগ্রই বালু উত্তোললনকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ড পরিচালনা করা হবে। আর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরী করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমাদের খাদ্য সামগ্রী মজুদ রয়েছে তালিকা হলেই দিয়ে দেয়া হবে। স্কুল রক্ষার জন্য সকল চেষ্টা অব্যহত আছে।
Leave a Reply