গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি :
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে টাকা ছাড়া মেলে না কোন ভাতার কার্ড। এছাড়া ভিজিডি কার্ড করতেও ইউপি মেম্বরকে দিতে হয় টাকা। এমনই অভিযোগ উঠেছে ডুমুরিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রমজেদ শিকদারের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত রমজেদ শিকদার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েই হতদরিদ্রদের বিধবা, বয়স্ক, মাতৃত্বকালীন, প্রতিবন্ধী ভাতা ও ভিজিডি কার্ড দিয়ে ২ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেছেন।
ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বয়স্ক ভাতা ভোগী আরজ আলী খান, জহর খান, মানিক মোল্লা, কুমদ বল্লভ, প্রমিলা বল্লভ, ঠান্ডু মোল্লা সহ অনেকে বলেন, আমাদের বয়স্ক কার্ড করে দিয়ে মেম্বর ২ হাজার, ২ হাজার ৫ শ’, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। টাকা ছাড়া তার কাছে কোন কাজ হয়না।
ভিজিডি কার্ডধারী অর্চনা মন্ডল, উন্নতি মন্ডল, দয়াল ঘরামী, উপানন্দ, রিনা, দিপা দেউরি, সন্ধ্যা বিশ্বাস বলেন, ভিজিডি কার্ড করার জন্য মেম্বার রমজেদ আমাদের কাছ থেকে ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা নিয়েছে। পরে সে আমাদের কার্ড দিয়েছে। শুনেছি টাকা ছাড়াই এ কার্ড দেয়া হয়। কিন্তু ইউপি মেম্বর টাকা নিয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগী শারমিন ও রাজিয়া জানান, তাদের মাতৃত্বকালীন ভাতা করে দিয়ে রমজেদ মেম্বর ২ হাজার ৫শ’ ও ৩ হাজার ৫শ’ টাকা নিয়েছে । টাকা ছাড়া তিনি কোন ভাতার কার্ড করেন না।
প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগী জাহাঙ্গীর খান, দেলোয়ার খান, রানা খান, বনলতা, সেলিম শেখ জানান, প্রতিবন্ধী ভাতা পেতে ইউপি সদস্য রমজেদ ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা নিয়েছে।
এছাড়া ওই মেম্বর বদর শেখের কাছ থেকে কয়েকটি ভাতাকার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ১৮ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ।
বিধবা পুষ্প বল্লভ ও মমতা বল্লভ জানান, বিধবা ভাতার কার্ড বাবদ তাদের কাছ থেকে ইউপি মেম্বর মোট ১২ হাজার টাকা নিয়েছেন।
এছাড়া প্রতিবন্ধী স্কুলে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নিরাপদ বল্লভের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রমজেদ শিকদারের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ইউপি মেম্বর রমজেদ সিকদার বলেন, ভাতা কার্ড ও ভিজিডি কার্ড দিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগের বিষয়টি অনেক আগেই বসে এলাকাবাসীর সাথে সমাধান করা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে গ্রামে দলাদলি রয়েছে।তাই প্রতিপক্ষ আমার আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই তারাইল ও ভেন্নাবাড়ি গ্রামের লোকজন দিয়ে মিটে যাওয়া বিষয়টি নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছে। তিনি ভাতা ও ভিজিডি কার্ড দিয়ে টাকা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
ডুমুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান কবির আলম তালুকদার বলেন, ওই ওয়ার্ডের সরকারি সুবিধাভোগীদের ডাটাবেজ তৈরীর সময় ৫০ টাকা করা হয়। এটি সালিশ করে সমাধান করা হয়। টাকার বিনিময়ে ভাতা ও ভিজিডি কার্ড পাইয়ে দেয়ার ব্যাপারে আমার কাছে কেউ মেম্বর রমজেদ সিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি। তাই বিষয়টি আমার জানা নেই।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানব রঞ্জন বাছাড় বলেন, সরকারি বিধি আনুযায়ী মেম্বররা ভাতার তালিকা করেন। ইউপি চেয়ারম্যান সেটা অনুমোদন করেন। তারপর যাচাই বছাই করে আমরা ভাতা কার্ড ইস্যু করি। এ কার্ড দিয়ে টাকা নেয়ার কোন বিধান নেই। আর টাকা নিয়ে থাকলে আমাদের কাছে অভিযোগ করতে হবে। অভিযোগ পেলেই তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply