গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি :
২ জেলায় পরীক্ষামূলক আবাদে খরা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের জাত বিনাধান-১৯ হেক্টরে ৫ টন ফলন দিয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকেরডাঙ্গা গ্রামের কৃষক শাহ আলম সরদারের জমিতে উৎপাদিত বিনাধান-১৯ জাতের ধান কেটে পরিমাপ করে মাঠ দিবস থেকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানী ও কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
এ জাতের ধান চাষে সেচ কম লাগে। সার ও কীটনাশক সাশ্রয় হয়। খরা সহিষ্ণু স্বল্প জীবন কালের এ ধান পরিবর্তিত জলবায়ু মোকাবেলা করে বাম্পার ফলন দিয়েছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র জানিয়েছে, চলতি আউশ মৌসুমে গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার ৩০ একর জমিতে ৩০টি প্রদর্শনী প্লটে এ ধানের আবাদ করেন কৃষক।
পাইকেরডাঙ্গা গ্রামের কৃষক শাহআলম সরদার বলেন, বিনা উপকেন্দ্র আমাকে বীজ, সার,কীটনাশক বিনামূল্যে দিয়েছে। তাদের পরামর্শে এ জাতের ধান চাষে সেচ সহ অন্যান্য খরচ খুবই কম লাগেছে। গাছ হেলে পড়েনা। প্রচলিত আউশ ধানের তুলনায় এ ধান অনেকগুন বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতের ধান সরু। তাই বাজারে বেশি দাম পেয়ে আমি আরো বেশি লাভবান হবো বলে আশা করছি।
কৃষক ইয়ারআলী সরদার বলেন, ধানের উৎপাদন দেখে আমার প্রাণভরে গেছে। আমি আগামীতে শাহ আলম চাচার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে এ ধানের চাষাবাদ করবো। আমাদের এলাকায় লাভজনক এ ধানের চাষ সম্প্রসারিত হবে।
গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলকার নাইন বলেন, আগামীতে আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জলাবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি মোকবেলা করা। সে জন্য আমাদের বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবন করছেন। এসব জাত কৃষকের হাতে তুলে দিয়ে তাদের পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে উপযোগী করে তুলছি। এরই অংশ হিসেবে খরা সহিষ্ণু উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের জাত বিনাধান-১৯ আবাদ করে কৃষক প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফলন পেয়েছেন। আমি এ জাতের ধান বীজ বিএডিসিকে উৎপাদন করে কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে অনুরোধ করছি।
গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম আকন্দ বলেন, ধান চষে পানির অপচয় রোধ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। তাই কম সেচে আউশ মৌসুমের এ ধানের আবাদ সম্প্রসারণ করতে হবে। আমাদের উদ্ভাবিত খরা সহিষ্ণু স্বল্প জীবন কালের এ ধান পরিবর্তিত জলবায়ু মোকাবেলা করে কৃষককে বাম্পার ফলন দিতে সক্ষম।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, বোরো মৌসুমে সেচ কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হয়। এতে প্রচুর পরিমানে পানির অপচয় হয়। ফলে পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আশার আশংকা রয়েছে। পরিবেশ রক্ষা ও জলাবায়ুর ঝুুঁকি মোকাবেলায় পানি সাশ্রয়ী আউশ ও আমন মৌসুমের বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ সম্প্রসারিত করতে সরকার কৃষককে উদ্বুদ্ধ করছে। বিনাধান-১৯ জাতের ধান পরিবেশ বান্ধব। গোপালগঞ্জের মাটি বেশি উর্বর। তাই এ ধান এখানে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলেছে। এ ধানের আবাদ বৃদ্ধি পেলে দেশে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। কৃষক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি মোকাবেলা করে টিকে থাকতে পারবেন। সেই সাথে তারা লাভবান হবেন।
Leave a Reply